শেরপুরের ইতিহাস

শেরপুরের ইতিহাস

শেরপুরের ইতিহাস

এক সময় ঠাট্টা করে ময়মনসিংহ কে গারোদের দেশ বলা হতো, ঠাট্টা হলেও কথাটা একদম ভিত্তিহীন বা মিথ্যা নয়। এর পিছনে কিছুটা সত্য নিহিত আছে, এই জেলার প্রাচীন ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে ১৬ শতাব্দীতে গারো পাহাড় হতে দক্ষিণ ব্রম্মপুত্র নদ পর্যন্ত সমগ্র উত্তর অঞ্চলে গারো, হাজং, কোচ সদ্দারগণ প্রায় স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে রাজত্ব করতেন। ১৪১২ সালে দলিপা নামে এক কোচ সরদার দশকাহনিয়া অঞ্চলে রাজত্ব করতেন, উত্তরে গারো পাহাড়, দক্ষিণে ব্রম্মপুত্র নদ পূর্বে নেতাই নদী হতে পশ্চিম ব্রম্মপুত্র পন পর্যন্ত দলিপার রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। তার রাজধানী ছিল গড়-জরিপা। গড়-জরিপা শেরপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে গিয়ে পশ্চিমে অবস্থিত।

Products list of Our Sherpur
শেরপুর জেলার যেসব পণ্য আওয়ার শেরপুর এ পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় ফিরোজ শাহ বাংলার সিংহাসনের অধিকার করে সেনাপতি মজলীম খা হুমায়ুন কোচ সরদার দলিপাকে পরাজিত করেন এবং তার সমগ্র স্বাধীন অঞ্চল সর্বপ্রথম মুসলমানদের রাজত্বে আসে, ইতিহাস মতে ইহাই ময়মনসিংহ অঞ্চলে মুসলমান প্রবেশের সূত্রপাত। ময়মনসিংহ গেজেটিয়ারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শেরপুর অঞ্চল স্থায়ীভাবে বাংলার স্বাধীন সুলতানদের অধিকারে এসেছিলো।

শেরপুরের ইতিহাস

১৮৯৭ সাল পর্যন্ত কোচ সর্দার দলিপার ঐ বিরাট দূর্গ প্রায় অক্ষত ছিল। ঐ বছরের প্রচন্ড ভূমিকম্পে দূর্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পরবর্তীকালে শেরপুরের জমিদারগণ ঐ অঞ্চল কৃষকদের কাছে পত্তন দিতে থাকেন। ফলে ঐ বিরাট দূর্গ এলাকা কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে একটি পুরানো মসজিদও (বারদুয়ারি) আছে। পরপর সাতটি মাটির সুউচ্চ প্রাচীর পরিবেষ্টিত ছিল। এই সব প্রাচীরের মাঝে ৬০ হাত প্রশস্ত এক একটা পরিখা ছিল। এই দূর্গের চারদিকে চারটা বিরাট বিরাট তোরণ ও মাঝে মাঝে পরিখা ছিল। উত্তর দিকের তোরণের পাশেই ছিল কোচদের “দেব মন্দির” দক্ষিণ তোরণের সংলগ্ন পূর্ব পাশে উচ্চ পর্যবেক্ষণিকা, কালক্রমে এই পর্যবেক্ষণিকা এক দরগায় পরিণত হয়, ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত দলিপার দূর্গ প্রায় অক্ষত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভীষণ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গড় জরিপার দূর্গ
বারো দুয়ারী মসজিদ | শেরপুরের ইতিহাস

১৫৮৪ সালে সাহাবাজ খাঁ কাম্ব বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন, তার অধীনে শেরআলী গাজী ছিলেন এই দশকাহনিয়ার ভূম্যাধিকারী। কোন এক কারণে রাজস্ব আদায়কারী রামভল্লভ শেরআলী গাজীর বিরাগভাজন হন এবং গাজীর হাতে নিহত হয়। নিহতের বিধাবা স্ত্রী সরাসরি মুর্শিদাবাদের দরবারে স্বামী হত্যার অভিযোগ করেন শেরআলী গাজীর বিরুদ্ধে। নবাবের বিচারে শেরআলী গাজীর সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা মৃত রামবল্লভের নাবালক পুত্র রামনাথকে দেওয়া হয় এবং রামনাথ নবাব কতৃক চৌধুরী খেতাব লাভ করে শেরপুর পরগনার জমিদার স্বীকৃত হন। ১৭৯০ সালে ময়মনসিংহ জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মি. ডাবলু রংনি শেরপুরের চৌধুরীদের সঙ্গে প্রথম দশমালা বন্দোবস্ত করেন। পরে মি. স্টিফেন বায়ার্ড তাদের সাথে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেন।

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুস সাত্তার লিখেছেন এই অঞ্চলের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রম্মপুত্র নদ, এখন ব্রম্মপুত্র মূল ধারা যমুনা দিয়ে প্রবাহিত হতো ব্রম্মপুত্রের মূল প্রবাহ। ব্রম্মপুত্রের পাড় থেকে শেরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত চর এলাকা সেই ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করেছে। এই নদীটা পার হতে দশকাহন কড়ি লাগতো। সেই জন্যই এ অঞ্চলের নাম হয় দশকাহনিয়া।

জেলা ওয়েবসাইট নিয়ে আমাদের পড়াশোনা
শেরপুরের ইতিহাস নিয়ে লেখাপড়া

ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে শেরপুর ছিল সংস্কৃত শিক্ষার অন্যতম স্থান। বাগরাকসার পন্ডিতেরা সারা বাংলাদেশে সুপরিচিত ছিলেন। ইংরেজ সরকার এদেশে প্রথম যে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন তার একটি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা অপরটি একটি সংস্কৃত কলেজ। ব্রিটিশ সরকার প্রথম দিকে ইংরেজি শিক্ষা দিতে চাননি, তারা চেয়েছিলেন মুসলমানেরা আরবি, ফার্সি ও হিন্দুরা শুধু সংস্কৃত শিক্ষা গ্রহণ করুক এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে পশ্চাৎপদ হয়ে থাকুক। কিন্তু রাজা রামমোহন রায় ও সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে ইংরেজি শিক্ষা তুমুল আন্দোলন শুরু হলে এবং ইংরেজদের প্রয়োজনে পরবর্তীতে ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তন চালু হয়। এ ছিল শেরপুরের ইতিহাস।

সূত্র- শেরপুরের ইতিবৃত্ত

Leave a Reply