Our Sherpur

শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস

১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনার সম্মিলিত আক্রমণে একেরপর এক জেলা মুক্ত হচ্ছে। আমাদের আনন্দের আর সীমা নেই। আমরা চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অধীর অপেক্ষা করছি। পাক ভারত যুদ্ধও শুরু হয়েছে। পাকিস্তান সরকার পরজয় টের পেয়ে আমেরিকারর সহায়তায় যুদ্ধ বিরতির চেষ্টা করছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বারবার আমেরিকা যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব আনছে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু থেকে ভারত ও রাশিয়া আমাদের জোরালো ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমেরিকার যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে রাশিয়া বারবার ভেটো দিচ্ছে।

জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করাতে না পেরে আমেরিকা তার সপ্তম নৌবহর চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাচ্ছে। রাশিয়াও পাল্টা বদলা নিতে তাদের নবম নৌবহর পাঠানোর হুসিয়ার দিচ্ছে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ জোড়ালো হচ্ছে, যেন সপ্তম নৌবহর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছার আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।

আমাদের সম্মিলিত বাহিনী চারিদিক থেকে মুক্তকরে ঢাকাকে ঘিরে ধরেছে। আমরা সন্ধে হতেই বিবিসি শোনার জন্য রেডিওর চারপাশে বসে থাকতাম। ঐ সময় রেডিও ছিল খুব কম। আকাশবাণী, বিবিসি ও ভয়েজ অব আমেরিকার খবর শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম। ঢাকা ঘেরাও করার পর পাকি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য সময় বেধে দেয়া হয়। তাদের পতন তখন সময়ের ব্যাপার। আমরা যেমন আনন্দিত তেমনি সঙ্কিতও বটে। কারণ ঢাকাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী। দেশের সব জেলা থেকে পালিয়ে পাকি বাহিনী ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছে। যদি সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তবে অগনিত জানমালের ক্ষতি হবে। তাদের পরাজয় যে নিশ্চিত তা তারা বুঝতে পেরেছে। ওদিকে পাকিস্তান থেকে রসদ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তারা মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছে। আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তাদের আর উপায় নেই। খবর শুনে আমরা উল্লাসে ফেটে পরছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কাছে থাকা গুলি আকাশের দিকে তাক করে ফায়ার করে আনন্দ করছে। আমরা গুলির শব্দ শুনেই “জয়বাংলা” ধ্বনিতে মুখরিত করছি।

এর মাঝে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধে ০৭:৩০ মিনিটে বিবিসির সংবাদ শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই। বর্বর পাকি বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে এদেশেকে মেধা শূন্য করতে বছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যারর চক্রান্ত করে। আগে থেকেই এদেশীয় কুখ্যাত রাজাকারদের সহায়তায় বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে ১৪ ডিসেম্বর রায়ের বাজারে নিয়ে হত্যা করে। পৃথিবীতে এমন নিষ্ঠুর ও বর্বর ঘটনা আর দ্বিতীয়টি নেই। বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে এরকম হৃদয় বিদারক ঘটনা সমগ্র জাতি তথা পৃথিবীকে স্তম্ভিত করে।

হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। তাঁদের মাঝে মনে পরছে মুনির চৌধুরী, সিরজ উদ্দিন হোসেন, আলীম চৌধএরী, সেলিনা পারভিন, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লা কায়সার, ফজলে রাব্বী, সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডাঃ ফজলে রাব্বী, আনোয়ার পাশা, ডাঃ মোর্তজা, ডঃ ফয়জুল মহী, ডঃ আমিনউদ্দিন, আবুল খায়ের, নিজাম উদ্দুন, রাশিদুল হাডান, গিয়াস উদ্দিন, এস এ মান্নান, আবদুল কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, সুখরন্জন সমাদ্দার এর নাম।

আজকের এ দিনে সবাই বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আর গর্বকরে বলতে চাই তোমাদের রক্ত বৃথা যায় নাই। আমরা তেমাদের যোগ্য উত্তরসূরিরা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। তোমরা বীরেরা দেখো আমরা তেমাদের স্বপ্ন সার্থক করবোই করবো ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা!!

লেখকঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম।   

Leave a Reply

Scroll to Top